Bangla story, Bangla golpo, love Story, thriller story, facebook story, facebook post

সিনীয়র আপু যখন বউ ৯ লেখকঃ স্বপ্নীল সাহেব কাজী

নিলা তুমি চলে যাও,আমি তোমার সাথে যেতে পারব না,আমি আমার বাবা মায়ের সাথেই থাকব৷আর আমি তোমার জন্য ত্যাজ্য হতে পারব না
.
কথাটা বলতেই নিলা কেমন অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো৷আর অসহায় দৃষ্টি নিয়েও কেমন হাসার বৃথা চেষ্টা করল৷কিন্তু হাসিটা তখন তার মূখে একদমই মানাচ্ছে না৷
অন্যদিকে আমার বাবা আর মা কেমন খুশিতে লাফ দিতে লাগল৷আব্বু তো বলেই ফেলল
.
--দেখো তন্ময়ের মা,বলছিলাম না,আমাদের ছেলে এত খারাপ না যে রাস্তার কোনো মেয়ের জন্য আমাদের কথার অবাধ্য হবে
.
তখনই নিলা চলে যেতে চাইল,আমি ওর হাতে ধরলাম৷আর আমি বললাম
.
--নিলা একটু দাড়াও, আর এক মিনিট বাবা,একটু আগে যে কথাগুলো আমি বলেছি তা যদি ভেবে থাকো,যে আমি এমনটাই করব,তাহলে সব চাইতে বড় ভূল করবা(আমি)
.
--মানে?(বাবা)
.
--মানে খূব সহজ,যদি ভেবে থাকো,নিলাকে আমি তাড়িয়ে দিবো আর তোমাদের সাথেই আমি থাকব তাহলে ভুল৷কারন যে মেয়েটা নিজের সবকিছু ছেড়ে,বিশাল অট্টালিকার মায়া ত্যাগ করে আমার মত একটা গরিব ঘরের ছেলের কাছে চলে আসতে পারে,সেই মেয়েটাকে আমি কখনই তাড়াতে পারব না,আর তাকে তাড়াবই বা কেমন করে?
.
---তন্ময়,চূপ বেয়াদব(চিৎকার করে আব্বু)
,
--ওগো তুমি ওর প্রতি রাগ করো না,ও তো ছোট তাই এমন ভূল করছে,ওকে বাসায় আটকিয়ে মেয়েটাকে তাড়িয়ে দাও,দেখবে কদিন পর ঠিক হয়ে যাবে(মা)
,
--মা,তাহলে অনেক বড় ভুল করবে,আর যদি আমাকে কেউ আটকাতে আসে,তাহলে আজ কোনো সম্পর্কই মানব না৷ভুলেও কেউ আমাকে আটকাতে আসবে না.
.
বলেই নিলার হাত ধরলাম ,আর বললাম
.
--চলো নিলা,যে বাড়িতে আমাদের দূজনকে একসাথে মেনে নিবে না,সে বাড়িতে আমরা কখনই থাকব না,
আর মা,ভেবেছিলাম তুমি অন্তত্য আমাকে একটু সাপোর্ট দিবা,কিন্তূ দিলে না,তবে এতে আমার কোনো দুঃখ নেই৷ভালো থেকো,আর যদি পারো আমাদের দোয়া করো"বাই
,
বলেই নিলার হাত ধরে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম৷খুব কষ্ট হচ্ছিলো কারন মা তখণ কান্না করছিল৷বার বার আচলে মূখ ঢাকছিল৷
আমি জানি,বাবার ওপরে মা কখনই কথা বলতে পারেনা৷কারন আমার বাবা অনেক রাগি,ওনি যেটা বলবেই,সেটাই মাকে করতে হয়৷
.
যাই হোক নিলাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম৷
নিলা তখন খূব কান্না করছিল,আর বার বার বলছিলো,
,,,তন্ময় তুমি ফিরে যাও,আমার জন্য নিজের এত বড় ক্ষতি করো না,,,!
.
কিন্তু ওর কোনো কথা কানেই নিলাম না৷চূপচাপ হাটতেছি৷আর ভাবতেছি এখন যাবো কোথায়?এত রাতে কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই৷রাত প্রায় ১১টা৷আর গ্রামে এই সময়টাই অনেক রাত৷কারন সবকিছুই অন্ধকারে তখন ঢেকে যায়৷
হঠাৎই ফোনে কল আসল৷ফোনটাতে তাকাতেই দেখলাম অপরিচিত নাম্বার৷রিসিভ করতে না চাইলেও ,ফোনটা ধরলাম কারন বলা তো যায় না,এই বিপদে কে কখন বন্ধু হয়ে পাশে দাড়ায়?
,
ফোনটা রিসিভ করতেই
.
--হ্যালো তন্ময়(ওপাশ)
,
--হুম,কে?
.
--আরে হারামি আমি রনি
.
--ওহ,দোস্ত কেমন আছিস(ও আমার হাই স্কূল লাইফের বন্ধু,ও নিজেও রিলেশন করে বিয়ে করে ফেলছে,তবে ও আমার বন্ধু হলেও ও অনেক বড়)
.
--দোস্ত,শুনলাম তুই নাকি বিয়ে করছিস
,
--হুম রে দোস্ত,বাসায় মেনে নিল না রে
,
--কি বলছিস এগূলো?আর এখন কই তুই?
.
--এইতো রাস্তায়.
.
--ওই হারামি ,নতুন বউ নিয়ে কেউ এত রাতে রাস্তায় থাকে নাকি?
.
--কোথায় যাবো রে ভাই?যাওয়ার তো কোনো রাস্তাই নেই.
.
--কে বলছে নেই?তুই তো আমার বাসায়ও চলে আসতে পারতি
.
--তোর সমস্যা হবে না?আর জায়গা আছে?
.
--আরে শালা,আমার বাসায় দুইটা রুম আছে৷একটা খালিই পাইরা থাকে৷আরেকটাতে আমি আর তোর ভাবি থাকি,তোর প্রবলেম না থাকলে,তুই চলে আয় বাকিটা আমি দেখতাছি
.
--থ্যাংকু দোস্ত
.
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম৷আর নিলাকে নিয়ে ওখানে যাবার জন্যই রওনা দিলাম৷ওর বাসা বেশি দুর না৷আমাদের পরের গ্রামেই ওর বাসা৷আমাদের বাসা থেকে হেটে যেতে এক ঘন্টার মত লাগে৷নিলাকে নিয়ে তখন হাটতে লাগলাম,নিলা বলল
.
--আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
.
--আমি যেখানে যাবো,আর হ্যা আমি যদি রাস্তায় থাকতে পারি,আমার সাথে রাস্তায় থাকতে পারবা?
.
--হুম পারব,কিন্তু..
.
--কোনো কিন্তু না,যদি পারো আমার সাথে চলো
.
--হুম,যেখানেই থাকিনা কেন?তোমার বুকে মাথা রেখে আমাকে একটু ঘুমাতে দিও,তাহলেই হবে,আমি আর কিছুই চাই না
.
কথাটা শুনে মনটা কেমন করে জানি উঠল৷যাই হোক বিপদে যতটা সাপোর্ট পাওয়া যায়,ততটাই সামনে আগানো যায়৷
.
নিলাকে নিয়ে অনেকক্ষন ধরেই হাটতেছি৷তবে আজ এক ঘন্টার পথ আর এক ঘন্টা নেই,মনে হচ্ছে কয়েক বছর৷রাস্তাই যেন শেষ হচ্ছেনা৷
গ্রামের আকাবাকা রাস্তাগূলোও যেন মনে হচ্ছে আজ আমার সাথে মজা নিচ্ছে.
,
আর এইদিকে বুঝতে পারলাম নিলার হাটতে হয়ত অনেক কষ্ট হচ্ছে,নিলাকে জিজ্ঞেস করলাম
,
--কষ্ট হচ্ছে?
.
--নাহ
.
--মিথ্যা বলতে হবে না,আমি জানি তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে,আর যেই মেয়েটা রিক্সা ছাড়া সামান্য একটু পথও চলে না৷সেই মেয়েটা মাইলের পর মাইল এমন উচু নিচু শক্ত মাটিতে হেটে যাচ্ছে,তার কেমন লাগতে পারে আমি জানি
.
--তন্ময়,তুমি না ভুল বুঝোনা,আসলে কি জানো প্রিয় মানুষগূলো পাশে থাকলে কোনো কষ্টই আর কষ্ট মনে হয় না৷শুধু আনন্দই লাগে
.
ওর উত্তর শুনে আমি কি উত্তর দিবো ভেবেই পাচ্ছিলাম না৷
.
আস্তে আস্তে পথ চলতে চলতে রনির বাসায় চলে আসলাম৷গিয়ে দেখি বন্ধু আমার আগে থেকেই ওর বউকে নিয়ে আমাদের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছে৷আমাকে দেখেই রনি দৌড়ে আসল৷আর আমাকে জড়িয়ে ধরেই বলল
.
--দোস্ত কেমন আছিস?তোর কথা খুব মনে পড়ে রে,আর তোর ভাবি তো তোর কথা প্রায়ই বলে(রনি)
,
--হুম ৷
.
আমি আর রনি কথা বলছি আর তখনই ওর বউ এসে হাজির
.
--এই যে তন্ময় ভাইয়া,আমাদের কে তো ভুলেই গেছো,আর সেই যে গেলে,আর দেখা করতেও আসলে না,আর আমার ভাবিটা কে একটূ দেখি,(ভাবি)
.
--নিলা,ও আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড,আর এটা ওর মিষ্টি বউ(আমি)
,
--হাই ভাবি,(রনির বউ)
,
--হাই(শুধু হাত নাড়া দিয়ে)
,
--এই তুমি কি আমার বন্ধুটাকে বাইরেই দাড় করিয়ে রাখবে?ভিতরে আগে চলো(রনি)
.
--ওপসসস কথার জালে পড়ে ভুলেই গেছি,
চলো তন্ময় ভাই,চলুন ভাবি
.,আর যার কারনেই আজকে আমরা এক হতে পেরেছি(রনি)
.
--তন্ময় ভাই,সেদিন না থাকলে তো,আমি বাসা থেকে বেরই হতে পারতাম না,উল্টো সেদিন আমার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যেত(ভাবি)
,
---ভাবি আর লজ্জা দিয়েন না তো,আমার ফাজলামি গুলো আমার বউয়ের সামনে আর ফাস কইরা দিয়েন না(আমি)
.
--আরে,এখানে আমরা কি ফাস করলাম?জানিস তন্ময়,তোকে আজ হেল্প করতে পেরে খূব খুশি লাগছে রে,(রনি)
.
--আমরা যে বাসা থেকে বের হইছি তুই জানলি কেমনে?(আমি)
.
--আসলে আন্টি ফোন দিয়ে আমাকে সব বলেছে
.
আসলে আম্মু যে কেমন সেটা একদমই অদ্ভুদ৷সেটা হয়ত বুঝার বয়স আমার হয়নি৷নিজে বাসায় জায়গা দিতে না পারলেও অন্যভাবে ঠিকই হেল্প করছে আমায়৷থ্যাংকু মা.
.
সবাই গল্প করছিলাম হঠাৎই ভাবি বলে ঊঠল
,
-ওপপস,আজ না ওদের বাসরঘর?আর আমরা তাদের এখানে বসিয়ে রাখছি,এই হাম্বা,তুমি গিয়ে বাসরঘর ঠিক করো,আর আমি ভাবিকে একটু সাজিয়ে দেই,যাও একদম দেড়ি .করোনা
,
,সেটাই আমাদের কাছে অনেক বেশি!
হঠাৎই বাইরে ভাবির আগমন
,
-এই যে তন্ময় ভাই,সব কিছু রেডি,এবার আসো তাড়াতাড়ি(ভাবি)
,
--ভাবি, ও কোথায়?(আমি)
.
--আরে বোকা,ও তো তোমার বাসরঘরে অপেক্ষা করছে(ভাবি)
.
--ও তাইতো
.
অবশেষে ভাবি আর রনি আমাকে বাসর ঘরে ডুকিয়ে দিল৷যদিও আজকের দিনটা আমাদের জন্য শুভ৷তারপরও আজ পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে কেমন জানি লাগছে৷
.
রুমে ডুকতেই নিলা খাট থেকে নেমে আসল৷আর এসেই আমার পায়ে সালাম করতে আসল?আর তখনই
.
--এই এই এটা কি করছো?বড় হয়ে ছোটদের পায়ে হাত দিচ্ছো কেন?হুমমমম
.
--আমি এখন তোমার স্ত্রী৷আর এজন্য এটা আমার দায়িত্ব৷আর ওইটা আমার বেহেশত৷আমাকে ওটা থেকে বঞ্চিত করোনা৷
,
আসলে কি বলব বুঝতেই পারছিলাম না৷
ও আমাকে সালাম করল৷আর আমি তখন ওকে উঠালাম৷আর বুকে জড়িয়ে ধরলাম৷ও কেমন কেপে উঠল৷
তখন খেয়াল করলাম৷আর কাপার কারনটা কি?আসলে ও কান্না করছিল
,
--এই মেয়ে কান্না করছো কেন?
.
--চুপ(ফুপাচ্ছে)
.
--এই কি হইছে,এভাবে কান্না করছো কেন
.
--ত তন ম য়,
আমারা জ ন্যই আজ তো তোমায় বাসা থেকে বের করে দিছে,আমাকে মাফ করে দিও(কান্নার কারনে কথাও বলতে পারছেনা)
.
--এই যে বোকা মেয়ে,এভাবে কান্না করলে কি হয় বলো?দেখবে দুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে৷প্লীজ কান্না করো না
.
তখনই নিলা আমাকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরল৷আর বলতে লাগল,
.
--এভাবে সব সময় আমকে ভালোবাসবে তো?কখনো ছেড়ে যাবে না তো?(অনেক কান্না করছিল)
.
নিজের চোখ দিয়েও তখন বৃষ্টির মত পানি পরতে লাগল৷কারন একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে কতটা ভালোবাসতে পারে,সেটা ওকে না দেখলে বোঝাই যেত না৷আর আমাদের বাসরঘরটাতে যে এমন একটা পরিস্থিতিতে আসবে সেটাও কল্পনার বাইরে.
.
--কি হলো চুপ কেন?বলো,আমাকে অনেক ভালোবাসবে তো?কখনও ছেড়ে যাবে না তো?
,
তখনই নিলাকে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম,আর বলতে লাগলাম
,
এই পাগলি একদমই কান্না করবা না,তুমি কি জানোনা,আমি আমার এই পাগলিটার কান্না একদমই সহ্য করতে পারিনা,
খুব ভালোবাসি আমার পাগলিটাকে,অনেক বেশিই ভালোবাসি,নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি,আর শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এভাবেই ভালোবেসে যাবো
.
দুজন দুজনকে নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছি৷
আর তখনই খেয়াল করলাম জানালার ফাকা দিয়ে চাঁদ মামাও আমাদের ভালোবাসা দেখে মিটিমিটি করে হাসছে৷আর আমাদের জন্য হয়ত তখন চাঁদের জ্যোৎস্নাটা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে....
.
.
..
.
.
.
চলবে........

To See Orginal post click here