Bangla story, Bangla golpo, love Story, thriller story, facebook story, facebook post

সিনীয়র আপু যখন বউ ৬ লেখকঃ স্বপ্নীল সাহেব কাজী



জানালা দিয়ে তাকানোর পর যা দেখতে পেলাম ,তা দেখার জন্য আমি মুটেও প্রস্তুত ছিলাম না,
একদমই অবাক হয়ে গেলাম,বুকটা তখন ধুক ধুক করছিল৷আর শরীরটা প্রচুর পরিমানে কাপতে লাগল.
নিজের শরীরটা একদম নিথর হয়ে আসছিল..
কারন জানালা দিয়ে স্পষ্টভাবেই দেখতে পেলাম
নিলা আপুর শরীরে স্যালাইন লাগানো অবস্থায়
বেডে শুয়ে আছে৷আর বাতি বাতির আলোয় খুব ভালোভাবেই বুঝা যাচ্ছে ওর মূখটা একদমই শুকিয়ে গেছে৷দেখতেও কেমন কালো হয়ে গেছে৷যেন চোখ দুটো খুলির ভিতরে চলে গেছে৷
নিলা আপুর এমন অবস্থা দেখে নিজেকে কোনো ভাবেই ঠিক রাখতে পারছিলাম না,চোখ দিয়ে আপনা আপনিই পানি বের হতে লাগল
.
বার বারই ভাবতে লাগলাাম,আমার জন্য ওনি এমন করেনি তো?যদি আমার জন্য ওনি এমন করে থাকে?যদি আমার জন্যই ওনি নিজেকে কষ্ট দিয়ে থাকে?
কথাগূলো ভাবতেই দুচোখ ভরে বৃষ্টির মত পানি পরতে লাগল৷আমি জানালা দিয়েই ওর দিকে একটানা চেয়ে রইলাম৷
.
আর আমার চোখ দিয়েও তখন প্রচুর পরিমানে বৃষ্টি ঝরছিল৷বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছিল৷
আমি আস্তে আস্তে জানালা দিয়ে ডাক দিতে লাগলাম কিন্তু শরীর অনেক দূর্বল হয়ে পড়ায়,আমার মুখ থেকেও তেমন কথা বের হচ্ছিল না৷
.আস্তে আস্তে রাত কেটে যাচ্ছিল আর আমার শরীরও কেমন নিথর হয়ে আসছিল৷তারপরও তার জন্য আমার বিন্দু পরিমানও ভ্রুক্ষেপ নেই৷আমি শুধু নিলা আপুর দিকেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি৷আজ বুঝতে পারছি মানুষ ভালবাসলে কেন এত পাগল হয়ে যায়,তার কাছে কেন,ভালোবাসাটাই সবচেয়ে বড় হয়ে দাড়ায়৷
.
হঠাৎই ফজরের আজান দিয়ে দিল৷আর আমি তখনও ওখানেই পাগলের মতই দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওকে দেখছি৷হঠাৎই খেয়াল করলাম নিলা আপু
শোয়া থেকে উঠে পরল৷আর শরীর থেকে নিজে নিজেই স্যালাইন খূলে ফেলল৷তারপর দরজা খুলে কোথায় যেন গেল৷নিলা আপুকে ডাকতে গিয়েও ডাকতে পারলাম না৷
,
প্রায় ১০-১৫মিনিট পর আবার আসল৷
আর আসার পর বুঝতে পারলাম,হয়ত ওনি ওযু করে আসছে৷আর তারপরই ওনি নামাজে দাড়িয়ে গেল৷ওর নামাজ পড়া শেষ হলো৷আর তারপরও ও প্রচুর কান্না করতে লাগল৷আর বলতে লাগল
,"""আল্লাহ,তুমি ওকে সুস্থ রেখো,জানিনা ও কেমন আছে,তবে তুমি তাকে খুব ভালো রেখো,আর ওর যেন কোনো ক্ষতি না হয়,
আর কখনই যেন মন খারাপ করে না থাকে
.
এমন অনেকগুলো কথাই আল্লাহর কাছে মোনাজাত করল৷
আসলে তখন কি করব বুঝতেই পারছিলাম না৷
না পারছি ভিতরে যেতে না পারছি কিছু করতে৷
শুধু চোখ দিয়ে পানীই বের হচ্ছিল৷
ওর নামাজ শেষ করে হঠাৎই ও জানালার দিকে
তাকালো৷আর আমি সরে যাবার আগেই ও আমাকে দেখে ফেলল৷
আর সাথে সাথেই দৌড়ে ও এই দিকে আসতে চাইল৷কিন্তু পারল না৷তার আগেই সে পড়ে গেল৷
বুঝতে পারলাম না কেন ও পড়ে গেল৷
ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে ওর কষ্ট হচ্ছে৷
তাই আমি দৌড়ে ওর দরজার সামনে চলে গেলাম৷কোনো ভয়ই পেলাম না৷
আমি জানি ওর ভাইয়ারা আমাকে দেখতে পেলে
একদমই খুন করে ফেলবে৷তবে যা করার
করুক আমি ওর কাছেই থাকব৷দরজার সামনে যেতেই ,একটু পরই দরজা খুলে গেল৷
আর আমাকে দেখে তো নিলা আপু একদমই আকাশের চাঁদ যেন খূজে পেয়েছে৷
আর সাথে সাথে আমার কপালে ,গালে মুখে,চুমু দিতে লাগল৷আর বলতে লাগল ,এই তুমি এখানে কিভাবে আসলে?আর আমি স্বপ্ন দেখছি না তো
,
--না,আপনি স্বপ্ন দেখছেন না,আমি সত্যিই এসেছি....(আমি)
.
--হুম,প্রতিদিনই তো আসো,আর বলো যাবে না,কিন্তু হঠাৎই শুন্যে হারিয়ে যাও,তুমি না আমাকে ছেড়ে যেও না,আমার না খূব কষ্ট হয়,এই তুমি কেমন আছো?ঠিক আছো তো?(কান্না করতে করতে)
.
--হুম,আমি ঠিক আছি,আর আমি, কখনই আরযাবো না
.
--চোখের ঘুমের ঘোরে যে স্বপ্ন দেখতেছি,সেটা যেন কখনই না ভাঙ্গে..
.
--তুমী স্বপ্ন দেখছো না,বাস্তবেই আমি এসেছি
.
নিলা আপু তখন সত্যিই বুঝতে পারল যে আসলে আমি ওনার স্বপ্নে না,বাস্তবেই এসেছি৷
তাই তিনি তাড়াতাড়ি নিজেকে ঠিক করে ,আমার কাছ থেকে একটু দূরে চলে গেলেন৷
.
আর বললেন
.
--তন্ময় ,তোমার এই অবস্থা কেন?তোমার চেহারার এ কি হাল হইছে?তুমি কি ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করোনি?নিজের কি একটুও খেয়াল রাখো নি?একদম কেয়ারলেস হয়ে গেছো কেন?তুমি নিজেকে কেন এত শাস্তি দিলে,
,
বলেই কান্না করতে লাগল৷তখন ভাবতে লাগলাম,ভালোবাসা কি এমন এক জিনিস,যেখানে একটু আগেও আমি খুব ভালোভাবেই দেখতে পেলাম নিলা আপু নিজেই অসুস্থ৷আর ওনার শরীরের অবস্থা একদমই ঠিক নেই,আর সেই জায়গায় থেকেও তিনি নিজের কথা না ভেবে,নিজের কষ্টগূলোকে ভুলে গিয়ে আমার কষ্টগূলোকেই সামনে তুলে ধরছে,হায়রে ভালো বাসা?আর এই ভালোবাসার মানুষটাকে আমী এত কষ্ট দিলাম? ছিঃ তন্ময় ছিঃ৷৷৷নিজের ওপরই তখন রাগ উঠলা লাগল৷আবারও নিলার আপুর ডাক
,
--এই তন্ময় ,কথা বলছো না কেন?তোমার এই অবস্থা কি ভাবে হলো?(কান্না করতে করতে)
,
---চুপ(ঠোট গূলো শুধুই কাপছে আমার৷কিছুই বলতে পারছিনা)
.
--প্লিজ তন্ময়,বলো তোমার কি হইছে?
,
--আমার কিছুই হয়নি,তার আগে বলুন আপনার কি হইছে?
.
--কই না তো,আমার কিছুই হয়নি?এই দেখো আমি একদম ঠিক আছি
,
--সেটা তো সারারাত ধরে দেখতেই পাইছি
,
--সারারাত?
.
--না কিছুনা
.
--তারমানে তুমি সারারাত ধরে জানালার পাশেই দাড়িয়ে ছিলে?
,
--জানিনা
,
--ঠাসসস,সত্যি কথা বল,এত রাতে মশার কামড় খেয়ে তুই কেন বাইরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিজেকে কষ্ট দিলি(শাসন শুরু করে দিল)
,
--আপনার জন্য!!
.
--আমার জন্য???
,
--হুম...
.
তখনই নিলা আপু কেমন জানি হয়ে গেল৷আর আবারও ওর দুচোখ ভরেই পানি,
.
তুমি এখানে কেন এসেছো?আর ভাইয়ারা দেখলে তোমাকে মেরেই ফেলবে!তুমি কি জানোনা আমার বাড়ির আশে পাশেও কোনো ছেলেকে দেখলে,তারা তাকে অনেক মারধর করে,আর তুমি আমার বাসার ভিতরে ডুকলে কিভাবে?
.
--মারলে মারুক,পারলে মেরে ফেলুক তারপরও যাবো না,
.
--প্লিজ পাগলামো করো না,তুমি চলে যাও,নয়ত অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে,ওরা তোমাকে মেরেই ফেলবে
.
--মেরে ফেলুক,আমি যাবো না
.
--কেন বুঝতেছো না,তুমি ছেলে হয়ে,আমার রুমের পাশে ,......
.
--দেখুন,আপনার ভাইয়ারা আমাকে মেরে ফেললে ফেলুক,তারপরও আমি আপনাকে ছেড়ে যাবো না
,
--কেন যাবে না?আমি তোমার কে?
.
--আমি যাবো না,কারন আমি আপনাকে ভালোবাসি,আর আপনি আমার সব
,
--হা হা হা,হাসালে তন্ময়,
,
--হাসির কি বললাম?
.
--না কিছু না,
.
--আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলবেন?
.
--হুম
.
-আমাকে খুব ভালোবাসেন তাই না?
.
--জানিনা৷তবে আমার মনে হয় তুমি এই কয়দিন ধরে ,একদমই খাওয়া দাওয়া করোনি,আর এখনও তোমার চোখে মুখে পেটের খিদে ভেস উঠছে
,
--কই না তো,
.
--একটূ দাড়াও
.
বুঝলাম না,ওনি কোথায় গেল?
একটু পরই ওনি খাবার হাতে করে নিয়ে আসছে৷
আর খাবার নিয়ে এসেই বলছে
.
--তন্ময়,একটা কথা রাখবে?
.
--হুম
.
--আমার খুব ইচ্ছা ছিল,তোমাকে নিজ হাতে কখনও খাইয়ে দিবো,আর আজকে তোমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেই? প্লীজ না করো না
.
--হুম,খাবো তার আগে বলেন,আমাকে আগের মত ভালোবাসবেন তো?
.
--হুম৷আমি আমার পাগলটাকে অনেক ভালোবাসি, আর সারাজীবন একাই ভালোবেসে যাবো
.
--একা ভালোবাসবেন কেন?আমিও কি ভালোবাসতে পারিনা?আমাকে কি সেই অধিকার টুকু দেওয়া যায়না?
.
--না তন্ময়,আমি তোমার বিরক্তের কারন৷আর তোমার পাশে থাকলে আরও অনেক বিরক্ত করব,তাই নিজেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিবো
.
--প্লিজ এভাবে বলবেন না,আসলে আপনার শূন্যতা আমাকে ভালোবাসা কি সেটা বুঝিয়ে দিছে৷আর আপনাকে ছাড়া আমি একদমই থাকতে পারব না৷নিজেকে একদমই শেষ......
.
আর বলতে পারলাম না৷এর আগেই আমার মূখে ওনি হাত দিয়ে ধরল৷আর বলল
.
--একদম মেরে ভুত বানিয়ে ফেলব,যদি উল্টা পাল্টা কথা বলিস,বল্লেই হলো নাকি নিজেকে শেষ করে ফেলবি?
,
--তাহলে বলুন,আমাকে ভালোবাসার সুযোগ দিবেন
,
--ওরে আমার পাগল রে,
.
বলেই একটা হাসি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল৷
একদমই সমস্ত শক্তি দিয়ে আমিও ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম৷তখন মনের ভেতরের জ্বালা যেন,নিমিষেই শেষ হয়ে গেল৷বুকের ভিতর কেমন জানি একটা শান্তু অনূভুত হতে লাগল৷
.
নিলা আপু তখনও আমাকে জড়িয়ে ধরেই রাখল৷
এভাবে অনেকক্ষন কেটে গেল৷আর নিলা আপু মনে হয় তখন অন্য কোনো একটা রাজ্যে চলে গেছে৷
.
আমি ওনাকে ডাক দিলাম
,
--এই নিলা আপু,নিলা আপু,এবার তো ছাড়ুন,,,
.
--ঠাসসস,আপু বললি কেন?
,
--তো কি বলব?(এতিমের মত গালে হাত দিয়ে)
.
--বউ বলে ডাকবি
,
--আপনি আমার বউও হয়ে গেছেন?কখন বিয়ে করলাম?
.
--ওই চুপ,বিয়ে হয়নি,তবে হবে৷পারবি না আমাকে বিয়ে করে ,তোর বউ করে সারাজীবন তোর পাশে রাখতে.....
.
--হুম পারব৷কিন্তু আমি যে এখন বিয়ে করতে পারব না৷আমার তো বিয়ের বয়স হয়নি,তার জন্য একটু সময় লাগবে..
.
-হুম আমি জানি,আর তোমার পড়াশোনা শেষ করো আগে,তার পরই বিয়ে,
.
--কিন্তু সে পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তো
,
--ওরে আমার বোকার মূখে দেখছি ভালোই কথা ফুটছে৷আর শুনো আমাকে কিন্তু এখন থেকে আর আপনি করে বলবা না
,
--হুম,বলব না,তবে আমাকে কিন্তু তুই করেই বলতে হবে
.
--দুর বোকা,নিজের হবু বরকে তুই করে বলতে নেই
,
--তাহলে নিজের সিনীয়র হবূ বউকেও.....
.
--থাক,আর একটা কথাও বলবা না...,,তুমি এখন দাড়াও আমি আসতেছি,খবরদার বাইরে বের হবে না,বের হলেই সমস্যায় পরবে
.
--হুম
.
তারপরই নিলা আপু থুক্কু এখন তো বউ হি হি হি
,
ও কোথায় যেন চলে গেল৷আর একটু পরই নিলা খাবার নিয়ে আসছে৷আর খাবার এনেই আমাকে খাটে বসালো৷আর খাটে বসিয়ে ও নিজেও পাশে বসল৷আর আমাকে বলল
.
--এগূলো এখন তোমাকে খেতে হবে
,
--না,আমি এখন খাবো না,তুমি খাও
,
--তুমি খাও
,
--না তুমি
,
--ওই চুপ,একদম চুপ করে গিলবি এগূলো৷একটা কথা বল্লেই এখন....
.
--ইসসস কী গুন্ডি মাইয়ারে,,,,এখনও মারতে চায়?(মনে মনে)
.
--চুপ কেন
,
--হুম খাচ্ছি.
.
বলেই যখন খেতে যাবো তখনই
,
--ওই তুই নিজে নিজে খেতে গেলি কেন?
,
--তো কি করব?
.
--চুপ করে বসে বসে থাকবি৷আর আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিবো
.
--আমি তোমার হাতে খাবো না,নিজে নিজে খাবো
,
--চুপ,একদম চুপ
.
ধমক দিয়েই আমাকে ও নিজ হাতে খাওয়াতে লাগল
.
--হা করো
,
-হা
,
--এই নাও
.
আমি হা করলাম,আর নিলা আপু আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগল৷আমি শুধু মেয়েটার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছি৷কি মায়া ওর মূখে৷শাসনের আড়ালে যে এত মায়া থাকে সেটা নিলা আপুকে না দিলে কখনই বুঝতে পারতাম না........
.
.
.
.চলবে..............