Bangla story, Bangla golpo, love Story, thriller story, facebook story, facebook post

বাবা-মা!!

বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে যখন বাসা থেকে বের হবো তখন দেখি মা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। মনে হয় কিছু একটা বলতে চাই কিন্তু আমার স্ত্রী শ্রাবণীর জন্য বলতে সংকুচ বোধ করছে। আমি মাকে বললাম,
-- মা, কিছু বলবে?
মা আমতা আমতা করে বললো,
~ তোর বাবা কয়েকদিন ধরে বলছিলো গলদা চিংড়ির কথা। খেতে না কি খুব ইচ্ছে করছে।
Photo by Andreas Wohlfahrt from Pexels
মার কথা শুনে শ্রাবণী কিছুটা মুখ গোমড়া করে বললো,
~ আজ তো মাসের ১০ তারিখ। এখন যদি গলদা চিংড়ি খেয়ে বেতনের সব টাকা শেষ করে ফেলে তাহলে বাকী ২০ টা দিন কিভাবে চলবে?
এমন সময় বাবা পাশের রুম থেকে হাসতে হাসতে বললো,
~ আরে খোকা, তোর মা ভুল বলেছে। আমি তোর মাকে বলেছিলাম ছোট ছোট চিংড়ি মাছ কচুর লতা দিয়ে খেতে খুব ইচ্ছে করছে।
আমি বাবার কথা শুনে কিছু বললাম না। চুপচাপ বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। মাছ বাজারে এসে দেখি বড় বড় গলদা চিংড়ি উঠেছে। চাইলেই আমি কিনতে পারতাম কিন্তু কিনি নি কারণ আমি বাবা মার অকৃতজ্ঞ সন্তান । ভালোবেসে বিয়ে করেছি আর বিয়ের পর বউয়ের গোলাম হয়ে গেছি। বউ যা বলে তাই শুনি।
বাজার করে এসে দেখি মা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মা হয়তো ভেবেছিলো আমি গলদা চিংড়ি ঠিকিই এনেছি। আমি মার হাতে ব্যাগটা দিয়ে বললাম,
-- মা পুরো বাজার খুঁজেছি কিন্তু কোথাও চিংড়ি পাই নি।
মা আমার কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো,
~সমস্যা নেই বাবা, আরেকদিন বাজারে গেলে নিয়ে আসিস।
মার এর মুচকি হাসিটার ভিতরে কতটা যে কষ্ট লুকিয়ে আছে সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম.....
বাবা মার ৩০ তম বিবাহ বার্ষিকীতে বাবা মাকে কিছু গিফট করার জন্য আমি আর শ্রাবণী শপিংয়ে এসেছি। আমি বাবা মার জন্য যে কাপড় পছন্দ করি সেটাই শ্রাবণীর পছন্দ হয় না। শেষ মেষ শ্রাবণী বাবার জন্য একটা লুঙ্গি আর মার জন্য একটা সুতি শাড়ি পছন্দ করলো।আমি শ্রাবণীকে বললাম,
-- এমন একটা স্পেশাল দিনে বাবাকে লুঙ্গি দিবো আর মাকে সুতি শাড়ি?
শ্রাবণী আমার দিকে কিছুটা রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
~ তোমার বাবা মা বাহিরে কোথাও যায় না কি, যে শুধু শুধু টাকা নষ্ট করে এত দামী কাপড় কিনে দিতে হবে। সারাদিন তো বাসায় বসে থাকে।
আমি আর কিছু বললাম না।
আজ তিনদিন ধরে বাবা অসুস্থ। শ্রাবণী আমার বাবার সেবা করবে দূরের কথা এই তিন দিনে সে বাবার ঘরে উঁকি দিয়েও দেখে নি বাবা কেমন আছে অথচ আজ তার মা পেয়াজ কাটতে গিয়ে সামান্য আঙুল কেটে ফেলেছে সে জন্য সে আমাকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে তার মাকে দেখতে এসে পড়েছে।
আমার সামনে আমার মা বাবার সম্পর্কে শ্রাবণী তার মার কাছে যা তা বলছে আর আমি দাঁড়িয়ে থেকে চুপ করে তা শুনছি। কিছুই বলছি না কারণ বউয়ের ভেড়া বলে কথা।
তার কয়েকদিন পর আমার শ্বশুর শাশুড়ি আমাদের বাসায় আসলো। শ্রাবণী আমার হাতে লম্বা একটা বাজার লিষ্ট দিলো। আর বললো আমি যেন লিষ্টে যা আছে তার সবগুলোই যেন কিনে আনি। আমি শ্রাবণীর কথা মত গরুর মাংস, খাসীর মাংস, বড় রুই মাছ, দেশী মাগুর মাছ সব কিনলাম।
বাজার করে বাসায় আসতেই শ্রাবণী হাসি হাসি মুখে বললো,
~ পিয়াস, বাবার জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়ে এই পাঞ্জাবিটা কিনেছি আর মার জন্য ৭ হাজার টাকা দিয়ে এই শাড়িটা কিনেছি। শাড়ি আর পাঞ্জাবিটা সুন্দর হয় নি?
আমি মুখে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললাম,
-- হে খুব সুন্দর হয়েছে।
শ্রাবণী নিজ হাতে রান্না করে তার মা বাবাকে খাওয়ালো। অথচ খাবার টেবিলে আমার মা বাবাকে ডাক দিলো না। আমিও কিছু বলি নি আর বলার কিছুই নেই।
খাওয়া দাওয়ার পর আমি শ্রাবণীকে আলাদা রুমে নিয়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-- শ্রাবণী, তুমি জানো তোমাকে আমি অসম্ভব ভালোবাসি?
শ্রাবণী মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,
~হে আমি জানি..
--তুমি এটা জানো, তুমি তোমার বাবা মা কে যতটুকু ভালোবাসো আমি তার থেকেও আমার বাবা মা কে বেশি ভালোবাসি?
শ্রাবণী আমার কথাতে কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
~মানে??
--- মানে টা হলো, আমার বাবা সামান্য চিংড়ি মাছ খেতে চাইলে মাস চালাতে সমস্যা হবে আর তোমার বাবা মা এত কিছু খাইলো এতে কি সমস্যা হবে না? আমার বাবা মার জন্য ৩০০ টাকার কাপড় তুমি পছন্দ করো অথচ নিজের বাবা মার জন্য ৫ হাজার ৭ হাজার টাকার কাপড় কিনে আনো। আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে তুমি তার দিকে ফিরেও তাকিয়ে দেখো না আর তোমার মার একটু আঙুল কাটলে কাঁদতে কাঁদতে উনাকে দেখতে চলে যাও। আর আমি কত বড় অকৃতজ্ঞ সন্তান আমি দিনের পর পর আমার বাবা মার প্রতি তোমার অবহেলা গুলো সহ্য করেছি। কি আর করা ভুল যেহেতু আমি করেছি তার সমাধান আমাকেই করতে হবে। আর সমাধানটা হলো এখন তোমার বাবা মার সাথে তুমিও চলে যাবে যেদিন আমার মা বাবাকে নিজের মা বাবার মতনই ভালোবাসতে পারবে সম্মান করতে পারবে, তখন ভেবে দেখবো তোমাকে এ বাড়িতে আনা যায় কিনা ..
শ্রাবণী হয়তো আমায় কিছু একটা বলতে চাইছিলো কিন্তু আমি ওর কোন কথা শুনতে চাই না কারণ ওর মত নিচু মন মানসিকতার মেয়ের সাথে কথা বলার কোন মানে হয় না। তাই ওর ডানগালে সজোরে একটা থাপ্পড় মেরে বললাম,
-- বাহিরে যাওয়ার দরজাটা এইদিকে.....
বিকাল বেলায় মা আর বাবাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। আমি মাঝখানে আমার ডান হাতটা ধরে আছে আমার মা আর বাম হাতটা ধরে আছে আমার বাবা ঠিক ছোটবেলা যেভাবে বাবা মার হাত ধরে হাটতাম ঠিক সেইভাবে এখন হাটছি...
-সংগৃহীত-
This post is copied from here